পঞ্জিকায় বাঙালির প্রথম পছন্দ “বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা”,কে এই বেণীমাধব শীল ?

 ‘বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা’ Benimadhab Seal's Panjika

পঞ্জিকায় বাঙালির প্রথম পছন্দ “বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা”,কে এই বেণীমাধব শীল ?


পঞ্জিকা (বা পাঁজি) হলো বাংলা ওড়িয়া, মৈথিলী, অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় পত্রিকা। বাঙালিদের মধ্যে বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা হলো অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত পঞ্জিকা। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে বিবাহ। গৃহকর্মের শুভ অনুষ্ঠান থেকে যাত্রার শুভক্ষণ নির্ণয়। সব কিছুতেই পঞ্জিকা ছাড়া বাঙালির চলে না। সাম্প্রতিক কালে আমরা যতই আধুনিকতায় বিশ্বাসী হয়ে উঠি না কেন, যে কোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের শুভ মুহূর্ত বিচার করতে একমাত্র ভরসা সেই পঞ্জিকা। বাঙালির জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পঞ্জিকা। সাধভক্ষণ, অন্নপ্রাশন, পৈতে, বিয়ে, শ্রাদ্ধ থেকে শুরু করে পুজো, পঞ্জিকার নিয়ম ব্যতীত কিছুই করা হয় না। এর পাশাপাশি মল মাসে কী কী নিষেধ, কোন লগ্নে শুভকাজ হবে, কোন তিথিতে কি কাজ করা উচিত কোনটা করা উচিত সবকিছু জানতে পঞ্জিকাই একমাত্র ভরসা। পঞ্জিকা থেকেই জানা যায় সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়, জোয়ার-ভাটার সঠিক সময়। প্রায় সারাবছরই রমরমিয়ে চলে পঞ্জিকার বিক্রি। আর পঞ্জিকার কথা উঠলেই সবার প্রথমে আসে বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকার কথা।

বেণীমাধব শীলের পরিবার ছিল হাওড়ার মাকড়দা এলাকার বাসিন্দা । আজ থেকে ১৬০ বছর আগে হাওড়ার মাকরদা থেকে মোহনচাঁদের প্রপিতামহ দ্বারিকনাথ শীল চাকরির খোঁজে এসেছিলেন কলকাতায়। সেদিন দ্বারিকনাথ যেখানে আশ্রয় পেয়েছিলেন, উত্তর কলকাতার সেই রাস্তার নাম আজ জয় মিত্র স্ট্রিট। চাকরি পান পোস্তায় পুরনো ট্যাঁকশালে। পরে ছেলে পূর্ণচন্দ্রও কাজ পান এই ট্যাকশালে। এই পূর্ণচন্দ্রই প্রথমবার বার করেন  ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা। কিন্তু, উনি ছিলেন সরকারি চাকুরে। তাই পঞ্জিকার ব্যবসা চালাতেন মা মনমোহিনী দেবীর নামে।পূর্ণচন্দ্র শীলের ছেলে বেণীমাধব শীল আর চাকরি নয়,  আজীবন ব্যবসা করেন পঞ্জিকা নিয়ে। তার হাত ধরেই পঞ্জিকা হয়ে ওঠে সর্বজনবিদিত বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা। পরাধীন ভারতে কৃতী ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা তাহাদের ব্যবসা সামগ্রীতে নিজেদের নাম জুড়ে দিত। তারা বিশ্বাস করত  এতে ব্যবসার মান উন্নত হয়। পাশাপাশি পন্য সামগ্রীর প্রতি ক্রেতাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। কিন্তু,  এক নামে অনেকেই পণ্য তৈরি হওয়াতে ক্রেতাদের মনে ভ্রান্তি দেখা দেয়।কোনটা আসল আর কোনটা নকল। তাই তিনি প্রথম শুরু করলেন পঞ্জিকাতে নিজের ছবি লাগানো। ক্রেতাদের আর কোন ভ্রান্তির  জায়গাই রইলো না। এক সাহেব প্রফেসর ফিলিপ কটলারসন বেণীমাধবের ব্যবসার এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে বলেছিলেন ‘এক শতাব্দী অতিক্রম করিয়াও কোন ব্যবসায়ী ইহাহেন সৎ সাহস দেখায়িতে পারিবে না।‘ বেণীমাধব শীল প্রয়াত হন ১৯৮৯ সালে। এখন ওই সব পঞ্জিকার মালিক তাঁর বড় ছেলে মোহনচাঁদ এবং ছোট ছেলে অভিজিৎ। এদের মেজ ভাই শশাঙ্ক শীল ১৯৯৯ সালে মারা যান। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের প্রায় গা-লাগোয়া অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিটে পাঁচতলা বাড়িটি এদের অফিস-কাম-বাড়ি (Address: Beni Madhab Seals Panjika Publications,  31, Abinash Kaviraj Street, Hatkhola, Kolkata, Listing id- 2349230) মোহনচাঁদের একটিই মেয়ে, পৌলোমী শীল ভট্টাচার্য। অভিজিতের দুই ছেলে অভিদেব ও অভিরণ। তিন ভাইবোন এখন বাবা-জ্যাঠার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন।

বেণীমাধব শীলের প্রায় সাত রকমের পঞ্জিকা আছে। সব ক'টির নামের শুরুতে রয়েছে বেণীমাধব শীল, তার পর ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা, সচিত্র পঞ্জিকা, ফুল পঞ্জিকা, হাফ পঞ্জিকা, পূর্ণাঙ্গ পঞ্জিকা, গার্হস্থ্য পঞ্জিকা ও পকেট পঞ্জিকা। শুধু বেণীমাধব শীলের যে বিভিন্ন সাইজের, পৃষ্ঠার, দামের সাত-সাতটা সংস্করণ ফি বছর বেরোয়, তার সম্মিলিত বিক্রি বছরে ’১২ লাখ’ ।

বেণীমাধব শীলের পাঁজি আজও বাঙালির অন্যতম সঙ্গী। বাজারে যদিও আছে বেশ কয়েকটি পঞ্জিকা। তবে বাঙালির আশা ভরসা আজও বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকাই। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষদিকেই পরের বছরের পঞ্জিকার কাজ শুরু হয়ে যায়। এভাবেই বছরের পর বছর চলে আসছে ‘বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা’।

আরও পড়ুন- কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং এর অজানা কথা 👈
        জেলখানার উপর তৈরি হয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল 👈
        মেদিনীপুর নামকরন হল কীভাবে? 👈

Post a Comment

1 Comments